করোনায় বন্দী ঈদ

ফারজানা মৃদুলা


মে ২১, ২০২০
০৭:২০ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২১, ২০২০
০৭:২৬ অপরাহ্ন



করোনায় বন্দী ঈদ

মুসলিম বিশ্বে চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। আর মাত্র কয়েকদিন পরই আসছে আনন্দের দিন ঈদ। কিন্তু করোনার প্রভাব এবারের ঈদের বাঁকা চাঁদের হাসি যেন সকলের হৃদয়ে খুশির বারতা বয়ে আনবে না। স্বজনের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্তে কাটাতে গ্রামের পানে ছুটছেন না মানুষ। বিপণিবিতান এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বাদে চিরচেনা সেই অসহনীয় যানজটবিহীন এক অচেনা শহর। 

চলতি বাস্তবতা করোনা নামটি যেন

ঈদের সেই চিরচেনা এলাহী কান্ড ও এবার লুকিয়ে থাকবে অগোচরে।  ঘরে আটকে থাকা মানুষের মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটার আনন্দ নেই।ঈদের দিন সকালে থাকবে না সেমাই কিংবা ফিরনী পরিবেশনের আতিথেয়তা। 

করোনার কারণে এবার ঈদের আনন্দও ফিকে হতে চলেছে। ঈদ-উল-ফিতরের উৎসব এবার সব বছরের মতো হবে না। ঈদের নামাজ আদায়, বাইরে ঘুরতে যাওয়া, নানা ধরনের আয়োজন সবকিছুই এবার যেন করোনা আসন পেতে বসেছে। আর আমাদের আলিঙ্গন করতে ডেকেই চলছে অবিরত। 

করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে সারাদেশে চলছে লকডাউন। মানুষ ঘরবন্দী হয়েই রোজা পালন করছে। অযথা বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। যে যে অবস্থানে রয়েছে সেখানেই ঈদ পালন করতে হবে সরকারি নির্দেশ মতে। প্রিয়জনের সাথে আনন্দ ভাগ করা থেকে বঞ্চিত হতে হবে অনেকেই। তারপরও আমরা চাই যেন বিতাড়িত হয় এ মহামারী। 

মার্চ থেকে করোনার যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে সব কিছুই এখন থমকে গেছে। গণপরিবহনগুলোতে এবার নেই সেই অগ্রিম টিকেট বিক্রির ধুম। কারণ প্রায় ২ মাস যাবত গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।

শপিংমলগুলো বন্ধ, কোথাও কেউ নেই। সরকার ঈদকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটার জন্য মার্কেট খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু দেশের বড় বড় শপিংমল পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্ধ রেখেছেন। এইজন্য তাদের ধন্যবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত হবে না। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে না ভেবে দেশের কথা বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

ধর্মমন্ত্রণালয় জানিয়েছে এবারের ঈদ জামাত খোলা মাঠে নয়, মসজিদে আদায় হবে। করা যাবে না ঈদের সেই চিরচেনা আকর্ষণীয় কোলাকুলি! থাকবে না সালাম করে সালামি পাওয়ার সেই অপেক্ষারত মজার মুহূর্ত।

করোনাভাইরাসমুক্ত পৃথিবী যেন একাদশে বৃহস্পতি

ছা' পোষা মানুষগুলোর জীবনে ঈদের আনন্দ একেবারেই পানশে থাকে বরাবর। থাকে না নতুন জামা পড়ার সেই অমৃত স্বাদ।

এবারের ঈদ কিন্তু সেই সকল মানুষদের পানশে ঈদের স্বাদ আমাদের গ্রহণ করাতে চলছে। হয়ত বা আমরা এই স্বাদ গ্রহণ করে তাদের মনের না বলা কষ্টগুলো খুব সহজেই উপলব্ধি করে আরও নিজেদের শুদ্ধ করতে পারব। ঈদে ৫/৬টি নতুন শাড়ি কিংবা জামা কেনার প্রতিযোগিতার ভিড়ে তো ভুলেই যাই নিজেদের বাড়তি এই অংশ থেকে দিয়ে দেই না কেন সেই সকল ছা' পোষা মানুষদের। তাহলে তো কবি নজরুল এর সেই গানের লাইনগুলোও স্বার্থকতা পেতো।

যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী সেই গরিব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এবারের ঈদ আনন্দ নেই বললেই চলে। অঘোষিত এই কারাগারে নেই হাতকড়া, নেই পায়ে বেড়ী। তবুও আমরা করোনার কারাগারে বন্দী আজ। মুক্তি কবে মিলবে এই প্রশ্নের উত্তর নেই জানা কারো।

লেখক : কলামলেখক