প্রভাবশালীদের খাল দখল, ওসমানীনগরে পানিবন্দি পাঁচ শতাধিক পরিবার

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জুলাই ০৪, ২০২০
০১:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৪, ২০২০
০১:৫৩ পূর্বাহ্ন



প্রভাবশালীদের খাল দখল, ওসমানীনগরে পানিবন্দি পাঁচ শতাধিক পরিবার

ঘর থেকে বের হলেই কাদা-পানিতে মাখামাখি। সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হচ্ছে জলবদ্ধতা। পুকুর, নর্দমার পানি মিলে-মিশে একাকার। পচা গন্ধে চারদিকের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শিশুরাও দিনের পর দিন গৃহবন্দি প্রায়। এমন অবস্থা বিরাজ করছে সিলেটের ওসমানীনগরের সাদিপুর ইউনিয়নের দু'টি গ্রামে। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় গত ৩ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে তাদের বিড়ম্বনার অন্ত নেই।

জানা যায়, সাদিপুর ইউনিয়নের পূর্ব তাজপুর ও সৈয়দপুর এলাকার প্রায় ৬শ পরিবার সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ঘরের উঠোন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সংযোগ খাল গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়ির বিলে পতিত হয়েছে। বৃষ্টি ও বাসা-বাড়ির পানি এ খাল দিয়েই নিষ্কাশন হয়। কিন্তু প্রভাবশালী কর্তৃক বিভিন্ন অংশ দখল হতে হতে ২০ থেকে ২৫ ফুট প্রস্থের খালটি একাধিক স্থানে সংকুচিত হয়ে কোথাও ৩ ফুটে এসে ঠেকেছে। অনেক জায়গায় বাঁশের আড়, ইটের দেয়াল তৈরি করে খাল দখলে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রায় ৩ বছর পূর্বে এলাকার কালনীরচর ও সুন্দিখলাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে কুশিয়ারা ডাইকের কালভার্ট ভরাট করা হয়। এরপর থেকে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বন্যার পানি তো আছেই, তার সঙ্গে সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। একবার জলাবদ্ধতা দেখা দিলে পানি সরতে কয়েকদিন সময় লাগে। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুম এলেই স্থানীয় লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্থানীয় প্রবীণ আরব উল্যা জানান, দুই কিলোমিটার দৈর্ঘের সরকারি খাল অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে দখল করে রাখা হয়েছে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। তার বাড়ির উঠানেও হাঁটু পানি। এলাকার শিশুদের মধ্যে এমনিতেই বর্ষাকালীন জ্বর-সর্দি লেগে আছে। তার উপর পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়লে তা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। নিত্যব্যবহার্য পানির জন্যও তাদের কষ্ট করতে হচ্ছে।

সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল আলী বলেন, 'কেউ কল্পনাও করতে পারবে না আমরা কী রকম দুর্ভোগের মধ্যে আছি। বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট, বাড়ির উঠোন সবদিকে পানি চলে আসে। পচা পানি ঠেলে মসজিদেও যেতে হচ্ছে। খাল দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি।'

পূর্ব তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহমদ আলী বলেন, 'জলাবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। এ সমস্যা সমাধানে কেউই এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে গত ১৮ জুন আমরা সরকারি খাল উদ্ধার করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছি।'

৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে। এ সমস্যা এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রব বলেন, 'আমার নিজের বাড়িতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ দখলের কারণে স্থানে স্থানে খালের পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এই ভোগান্তি। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।'

ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা বেগম বলেন, 'এলাকা পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। ইতোমধ্যে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে খালের সরকারি অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া গ্রামবাসীর এই সমস্যা স্থায়ীভাবে নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গেও বসা হবে।'

 

এএফ/০৬